সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক ও নাট্যকার হুমায়ূন আহমেদ এবং তাঁর স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওনকে ঘিরে একটি আজব ও ভিত্তিহীন গুজব ছড়িয়ে পড়েছে। গুজবে দাবি করা হয়, শাওন নাকি স্বপ্নে হুমায়ূন আহমেদকে দেখে অন্তঃসত্ত্বা হয়েছিলেন—যা বাস্তবতার সঙ্গে সম্পূর্ণ সাংঘর্ষিক এবং রীতিমতো হাস্যকর।
এই গুজব ছড়ানোর পাশাপাশি হুমায়ূন আহমেদের ব্যক্তিগত জীবন নিয়েও নানা বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানো হচ্ছে। বিশেষ করে তাঁর প্রথম স্ত্রী, তাঁদের সন্তানরা, এবং পরবর্তীতে শাওনের সঙ্গে তাঁর পরিচয়—এসব বিষয়কে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বিকৃত করে উপস্থাপন করা হচ্ছে।
প্রথম সংসার ও সন্তানরা।
হুমায়ূন আহমেদের প্রথম স্ত্রী ছিলেন গুলতেকিন খান। তাঁদের সংসারে তিন ছেলে ও এক মেয়ে জন্ম নেয়। লেখক হিসেবে খ্যাতির শীর্ষে থাকা অবস্থাতেও তিনি তাঁর সন্তানদের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রেখেছিলেন। তবে দাম্পত্য জীবনের টানাপোড়েনের কারণে এই সংসারের পরিসমাপ্তি ঘটে।
মেহের আফরোজ শাওনের সঙ্গে হুমায়ূন আহমেদের পরিচয় হয় নাটক ও অভিনয় জগতের সূত্রে। সময়ের সঙ্গে পেশাগত পরিচয় ব্যক্তিগত সম্পর্কে রূপ নেয় এবং পরে তাঁরা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। এই সম্পর্ক নিয়ে শুরু থেকেই নানা আলোচনা-সমালোচনা থাকলেও, এটি ছিল দু’জন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের পারস্পরিক সিদ্ধান্ত।
২০১২ সালে যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যু হয়। তাঁর মৃত্যুর পর থেকে মাঝে মাঝেই সামাজিক মাধ্যমে তাঁর সম্পত্তি, সাহিত্যকর্মের স্বত্বাধিকার (কপিরাইট) এবং পারিবারিক বিষয় নিয়ে বিতর্ক ছড়ানো হয়। শাওন নাকি এককভাবে তাঁর সমস্ত সম্পদ ভোগ করছেন এবং লেখাগুলোর কপিরাইট নিজের নামে নিয়ে নিয়েছেন—এমন দাবিও মাঝেমধ্যে সামনে আসে।
তবে বাস্তবতা হলো, এসব বিষয়ে আইনি প্রক্রিয়া ও পারিবারিক সমঝোতার মাধ্যমেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কোনো কিছুই গোপনে বা বেআইনিভাবে দখল করা হয়নি—এমনটাই সংশ্লিষ্ট সূত্র ও পারিবারিক ঘনিষ্ঠরা বারবার জানিয়ে আসছেন।
সম্প্রতি শাওনকে ঘিরে ছড়ানো “স্বপ্নে গর্ভধারণ” সংক্রান্ত গুজবটি সম্পূর্ণ মিথ্যা বলে প্রমাণ করেছে একাধিক সংবাদমাধ্যম এবং ফ্যাক্ট-চেকিং প্ল্যাটফর্ম, যার মধ্যে রয়েছে ‘নিউজ স্ক্যানার’-এর মতো প্রতিষ্ঠান। তারা জানিয়েছে, এই দাবির পক্ষে কোনো তথ্যপ্রমাণ তো নেই-ই, বরং এটি নিছক কল্পনাপ্রসূত ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচার।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জনপ্রিয় ব্যক্তিত্বদের নিয়ে এমন গুজব নতুন কিছু নয়। সামাজিক মাধ্যমে লাইক, শেয়ার এবং ভিউ বাড়ানোর জন্যই মূলত এসব ভুয়া গল্প ছড়ানো হয়।
হুমায়ূন আহমেদ বাংলা সাহিত্যের একটি বড় নাম। তাঁর জীবন ও কাজ নিয়ে সমালোচনা হতে পারে, কিন্তু ভিত্তিহীন গুজব ছড়িয়ে তাঁর স্মৃতি ও তাঁর পরিবারের সম্মান ক্ষুণ্ন করা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। পাঠক ও সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারীদের উচিত—যেকোনো খবর বিশ্বাস করার আগে তার উৎস ও সত্যতা যাচাই করা।
Post a Comment