আমরা যদি ছায়াপথের ভিতরেই থাকি, তাহলে ছায়াপথের চিত্রটি বাইরে থেকে কিভাবে নেওয়া হয়েছে?

মিল্কি ওয়ের ছবির জন্য ইন্টারনেটে অনুসন্ধান করলে আপনি সব ধরণের ছবি পাবেন: উন্নত ক্যামেরায় তোলা রাতের আকাশ জুড়ে উজ্জ্বল ছায়া, শক্তিশালী টেলিস্কোপ দ্বারা নেওয়া ছায়াপথের ঝকঝকে ছবি এবং শেষ পর্যন্ত একটি সর্পিল/ প্যাঁচানো সম্পূর্ণ ছায়াপথের ছবি! ওহ, কি বললেন?! সম্পূর্ণ ছায়াপথের ছবি?! আমরা যদি মিল্কিওয়ের ভিতরেই থাকি তবে কীভাবে আমাদের পুরো মিল্কিওয়ের ছবি তুলব? আসল কথাটা আগেভাগেই বলে রাখি, আমরা কখনোই তা করতে পারি নি। আমাদের সম্পূর্ণ মিল্কিওয়ের আসল কোন ছবি নেই!

এটি মিল্কি ওয়ে নয়। এটি আসলে এনজিসি 4414, কোমা বেরিনিস নক্ষত্রমণ্ডলে (constellation Coma Berenices) একটি সাধারণ সর্পিল ছায়াপথ যা প্রায় 55,000 আলোকবর্ষ ব্যাস এবং পৃথিবী থেকে প্রায় 60 মিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে।

পৃথিবী মিল্কিওয়েতে অবস্থিত, তবে এটি এর কেন্দ্রের কাছাকাছিও কোথাও নয়। আমরা কেন্দ্রের সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাকহোল থেকে প্রায় ২৫,০০০ আলোকবর্ষ, এবং বাইরের প্রান্ত থেকেও প্রায় ২৫,০০০ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থান করছি। ম্যাট উইলিয়ামস ইউনিভার্স টুডেতে লিখেছেন, মিল্কিওয়ে যদি একটি ভিনাইল রেকর্ড (কলের গানের রেকর্ড) হয় তবে আমরা কেন্দ্র এবং প্রান্তের মাঝামাঝি কোন একটি খাঁজে থাকতাম। গ্যালাক্সিটি নিজেই ডিস্কের মতো আকারযুক্ত, কেন্দ্রের অংশটি একটু স্ফীত এবং কাছাকাছি ছায়াপথগুলির টানের কারনে আকার কিছুটা বিকৃত।

যদি আপনি অন্ধকার, আলো দূষণমুক্ত কোন এলাকায় যান তবে রাতের আকাশ জুড়ে এক ঝলমলে ব্যান্ডের লাইন দেখতে পাবেন। এটি মিল্কিওয়ের প্রস্থচ্ছেদ বলতে পারেন। (রূপক অর্থে বলতে গেলে, আপনি যদি ভিনাইল রেকর্ডের বাইরের প্রান্তে বসে থাকতেন তবে আপনি একে বৃত্ত নয়, বরং সমতল রেখারূপে দেখতে পাবেন। আমাদের ছায়াপথের জন্যও এটা প্রযোজ্য)। তবে এটি হচ্ছে পৃথিবী পৃষ্ঠ থেকে। মহাকাশযান থেকে দেখলে কিরকম হবে?

পৃথিবী থেকে সর্বাধিক দূরত্বে ভ্রমণকারী মহাকাশযানটি হল ভয়েজার ১। ভয়েজার ১ ২০১৭ সালে এর উৎক্ষেপণের ৪০ তম বার্ষিকীতে পৃথিবী থেকে ১৩ বিলিয়ন মাইল (২১ বিলিয়ন কিলোমিটার) দূরে ছিল। এই দৃষ্টিকোণ থেকে বলতে গেলে এক আলোকবর্ষ প্রায় ৫.৯ ট্রিলিয়ন মাইল (৯.৫ ট্রিলিয়ন কিলোমিটার), এবং আমাদের মিল্কিওয়ের পুরুত্ব ১০০০ আলোকবর্ষ। সুতরাং এটা নিশ্চিতভাবে বলা যায় যে, এটি আমাদের জীবদ্দশায় কখনো মিল্কিওয়ে ছেড়ে যেতে পারবে না।

তবে এর মানে এই নয় যে আমাদের জীবদ্দশায় আমরা মিল্কিওয়ের কিছু দুর্দান্ত ছবি দেখতে পারব না। । হাবল, চন্দ্র এবং স্পিজিটরের মতো শক্তিশালী টেলিস্কোপগুলি আমাদের ছায়াপথের বিভিন্ন টুকরো টুকরো অংশকে আলোর বিভিন্ন তরঙ্গদৈর্ঘ্যে ধারণ করে, যা জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা একসাথে জোড়া দিয়ে যতটা সম্ভব আমাদের গ্যালাক্সির একটি পরিপূর্ণ ছবি তৈরি করে। এবং সেই টেলিস্কোপগুলি অন্যান্য ছায়াপথগুলি সম্পূর্ণরূপে দেখতে পারে। অন্যান্য ছায়াপথের আকার আকৃতি এবং আমাদের মিল্কিওয়ের টুকরো টুকরো ছবি জুড়ে দিয়ে শিল্পীরা আমাদের গ্যালাক্সিটি আসলে কেমন দেখতে তার একটি গ্রহণযোগ্য ছবি তৈরি করে।

এইভাবে, আপনি মিল্কিওয়ে দেখেছেন যেটা অনেকটা জীবন্ত ডাইনোসর দেখার মতো। কেউ তাদের নিজের চোখে ডাইনোসর দেখেনি, কিন্তু দশকের পর দশকের গবেষণা ডাইনোসর দেখতে কেমন সে সম্পর্কে একটি নিখুত এবং সঠিক অনুমান করতে সক্ষম করেছে।

Post a Comment

0 Comments